নিজস্ব প্রতিবেদক: জামালপুরে সাংবাদিক গোলাম রব্বানী নাদিম হ'ত্যাকা'ণ্ডের এক মাসেরও বেশি সময় অতিবাহিত হয়েছে। কিন্তু এখন পর্যন্ত এজাহারভুক্ত মাত্র পাঁচ আসামিকে গ্রেফ'তার করা হলেও ধরাছোঁয়ার বাইরে ১৭ জন।
পরিবারের দাবি, নাদিম কিলিং মিশনে অধিকাংশই আওয়ামী লীগসহ অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা অংশ নেন, যা এরইমধ্যে বিভিন্ন গণমাধ্যমে উঠেও এসেছে। কিন্তু তারা গ্রেফতার না হওয়ায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন নাদিমের পরিবারের সদস্যরা।
তবে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কর্মকর্তারা বলছেন, মামলাটি খুবই গুরুত্বের সঙ্গে দেখছেন তারা। এই হ'ত্যাকা'ণ্ডের যে বা যারাই জড়িত থাকুক না কেন তাদের ছাড় দেওয়া হবে না। এজন্য তাদের বাহিনীর সদস্যরা প্রতিনিয়ত কাজ করে যাচ্ছেন।
এদিকে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা বলছেন, তাদের দলে অন্যায়কারীদের কোন জায়গা নেই। নাদিম হ'ত্যাকা'ণ্ডে জড়িত থাকার অভিযোগে এরইমধ্যে আটজনকে দল থেকে সাময়িক বহিষ্কার করা হয়েছে। এছাড়া জড়িতদের সর্বোচ্চ শাস্তি দাবি করেছেন তারা।
বহিষ্কৃতরা হলেন, বকশীগঞ্জের সাধুরপাড়া ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মাহমুদুল আলম বাবু, বকশীগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সহ-প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক এম ডি রাকিবিল্লাহ রাকিব, উপজেলা ছাত্রলীগের যুগ্ম আহ্বায়ক ফাহিম ফয়সাল রিফাত, উপজেলা তাঁতি লীগের সভাপতি মো. শহিদুর রহমান লিপন, সাধুরপাড়া ইউনিয়ন তাঁতি লীগের সাধারণ সম্পাদক মো. রেজাউল করিম, বকশীগঞ্জ পৌর স্বেচ্ছাসেবক লীগের তথ্য ও সাহিত্য বিষয়ক সম্পাদক মো. মিলন চৌধুরী, সাধুরপাড়া ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সভাপতি শামীম গাজী এবং সাধুরপাড়া ইউনিয়নের ৩ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি মো. আন্দোলন সরকার।
সংবাদ প্রকাশকে কেন্দ্র করে গত ১৪ জুন রাতে বকশীগঞ্জ বাজারের পাটহাটি এলাকায় বাবু চেয়ারম্যানের সন্ত্রা'সী বাহিনীর হামলার শিকার হন বাংলানিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের জেলা প্রতিনিধি ও জামালপুর অনলাইন জার্নালিস্ট অ্যাসোসিয়েশনের সহ-সভাপতি নাদিম। পরদিন ১৫ জুন বিকেল পৌনে ৩টায় ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মারা যান।
নাদিমের মৃ'ত্যুর পর হামলার সিসিটিভি ফুটেজ দেখে ৯ জনকে আটক করা হয়। মামলা হওয়ার আগে পঞ্চগড়ের দেবীগঞ্জ থেকে প্রধান আসামি মাহমুদুল আলমসহ তিনজনকে আটক করে র্যাব। ওইদিন বিকেলে বগুড়া থেকে আরও একজনকে আটক করা হয়। পরে ২২ জনের নাম উল্লেখ করে মামলা করেন নাদিমের স্ত্রী মনিরা বেগম। মামলার আগে-পরে প্রধান আসামিসহ ১৩ জনকে আটক করা হয়। তাদের সবাইকে ওই মামলায় গ্রেফতার দেখানো হয়। পরে সব আসামির বিরুদ্ধে রিমান্ড চেয়ে পুলিশ আদালতে পাঠায়। আদালত তাদের সবাইকে বিভিন্ন মেয়াদে রিমান্ডে পাঠান।
এর মধ্যে প্রধান আসামি মাহমুদুল আলমের পাঁচ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করা হলে তিনি ১৬৪ ধারায় নাদিম হত্যাকাণ্ডে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করে জবানবন্দি দেন। পরে তাকে কারাগারে পাঠানো হয়। সম্প্রতি এ ঘটনায় আরও তিনজনকে গ্রে'ফতার করে পুলিশ। সব মিলিয়ে এ মামলায় এখন ১৬ জন কারাগারে আছেন।
এদিকে, সাংবাদিক নাদিম হ'ত্যাকা'ণ্ডের ঘটনায় এখন পর্যন্ত যারা গ্রেফ'তার হয়েছেন তাদের মধ্যে মামলার এজাহারে নাম আছে মাহমুদুল আলম বাবু, রেজাউল করিম, মো. মনিরুজ্জামান, মো. মিলন মিয়া ও মো. গোলাম কিবরিয়ার। এই পাঁচজন ছাড়া বাকি আসামিদের নাম এজাহারে নেই। অর্থাৎ এজাহারে থাকা ২২ জনের মধ্যে পাঁচজনকে পুলিশ গ্রেফতার করতে সক্ষম হলেও বাকি ১৭ জনকে এখনো ধরতে পারেনি। তাই এ ঘটনায় পুলিশের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।
অভিযোগ রয়েছে, বকশীগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সোহেল রানার দায়সারা বক্তব্য আর অবহেলার কারণে একে একে পালিয়ে যেতে সক্ষম হন চেয়ারম্যানপুত্র ফাহিম ফয়সাল রিফাতসহ বাকি আসামিরা। তারা এখন দেশে রয়েছেন কি না সেটা নিয়েও শঙ্কা প্রকাশ করেছে নাদিমের পরিবার।
এ বিষয়ে নাদিমের মেয়ে রাব্বিলাতুল জান্নাত বলেন, এক মাসের বেশি হলো বাবাকে হারিয়েছি। এখনো অধিকাংশ আসামি গ্রেফ'তার হয়নি। তারা কি আদৌ দেশে আছে নাকি দেশ ছেড়ে পালিয়েছে তাও আমরা জানি না। এদিকে চেয়ারম্যান বাবুর আত্মীয়-স্বজনরা আমাদের নানাভাবে হুমকি-ধামকি দিয়ে যাচ্ছে। তারা বলছে, বাবুর কিছু হলে আমাদের কাউকে ছাড়বে না। এক এক করে হত্যা করবে।
নাদিমের স্ত্রী মনিরা বেগম বলেন, আসামিরা সবাই চিহ্নিত সন্ত্রা'সী। এরা কারা সবাই তা জানে। কেন তাদের আইনশৃঙ্খলা বাহিনী গ্রেফতার করতে পারছে না সেটিই এখন প্রশ্ন।
নাদিম হ'ত্যা মামলা বর্তমানে জেলা গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি) তদন্ত করছে। এ বিষয়ে জানতে চাইলে জেলা ডিবির ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আরমান আলী বলেন, নাদিম হত্যা মামলায় এখন পর্যন্ত ১৬ আসামি গ্রেফতার হয়ে কারাগার আছে। বাকিদের গ্রেফতারে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী কাজ করছে।
প্রকাশক ও সম্পাদকঃ রফিকুল ইসলাম
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত