নিজস্ব প্রতিবেদক: মানিকগঞ্জের ৭টি উপজেলার মধ্যে অন্যতম পদ্মা-অধ্যুষিত উপজেলা হরিরামপুর। পঞ্চাশ দশক থেকে অনবদ্য পদ্মার ভাঙনের সঙ্গে অনবরত লড়াই করে জীবনযাপন করছে উপজেলার ভাঙনকবলিত ৯টি ইউনিয়নের লক্ষাধিক মানুষ। বর্ষায় পদ্মার ভয়ংকর রূপে দিশেহারা পদ্মাপাড়ের জনগণ।
আবার বর্ষার পানি চলে যেতে না যেতেই পদ্মার বিভিন্ন স্থানে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে জেগে ওঠে ডুবোচর৷ এতে তা প্রাকৃতিক নৈসর্গিক সৌন্দর্যের লীলাভূমিতেও পরিণত হয়। প্রকৃতিক সৌন্দর্য উপভোগ করতে এসব চরাঞ্চলে বিভিন্ন স্থান থেকে দর্শনার্থীদের আগমন ঘটে। শুধু মানুষই নয়, শীতের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত পদ্মার বুকে জেগে ওঠা নতুন চরে প্রকৃতির প্রেমে পড়ে দলবেঁধে ছুটে আসে নানা প্রজাতির অতিথি পাখি। পাখিদের কিচিরমিচির শব্দে মুখরিত হয়ে ওঠে পদ্মার চর।
সুদূর হিমালয় থেকে সাইবেরিয়ার তীব্র ঠান্ডা থেকে মুক্তি পেতেই একটু উষ্ণতার সন্ধানে হাজার হাজার মাইল পাড়ি দিয়ে অতিথি পাখিরা ছুটে আসে বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চলের হাওর-বাঁওড় ও জেগে ওঠা নদীর চরে। শুধু শীতের সময়ই বাংলাদেশে এসব পাখির দেখা মেলে। সে জন্যই আমাদের দেশে এদেরকে বলা হয়ে থাকে অতিথি পাখি। পাখিগুলো দেখতে যেমন সুন্দর, তেমনই চোখজুড়ানো তাদের খুনসুটি।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, প্রতি বছরই হরিরামপুরের বিভিন্ন পয়েন্টে পদ্মার মাঝে অনেক এরিয়াজুড়ে নতুন নতুন ডুবোচর জেগে উঠলে এসব অতিথি পাখির আগমন ঘটে। এতে করে বালু বাতান, জোড়ালী, কাদা খোঁচা, বাবু বাতানসহ নানা প্রজাতির অতিথি পাখির দেখা মিলে এ চরগুলোতে। কখনো জলে ডুবসাঁতার দিচ্ছে, কখনোবা ঝাঁক বেঁধে মুক্ত আকাশের নীলে উড়ে বেড়াচ্ছে তারা।
উপজেলার আন্ধারমানিক এলাকার ট্রলার ঘাট থেকে কয়েক কিলোমিটার দূরে গেলেই চোখে পড়ে পদ্মায় জেগে ওঠা নতুন চর অতিথি পাখির মিলনমেলা। সন্ধ্যার গোধূলি আভায় যেন পাখিদের কিচিরমিচির বেড়ে যায়। সূর্য ডোবার সঙ্গে সঙ্গেই পাখিরা দলবেঁধে মিলিয় যায় দূরে কোথাও। আবার ভোরে সূর্যের আলো ফোটার সঙ্গে সঙ্গেই নেমে পড়ে নদী কিংবা বিল বাঁওড়ে।
স্থানীয়দের দাবি, প্রতি বছরই এলাকায় নতুন নতুন চর জেগে ওঠে এবং বিদেশি এসব পাখির আনাগোনাও দেখা যায়। অনেকেই নৌকা নিয়ে চরে গিয়ে খুব কাছে থেকে পাখিদের সৌন্দর্য উপভোগ করেন। অনেকে শখের বশে শিকারও করেন৷ তাই এ সময়টা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর একটু খোঁজখবর রাখা উচিত। প্রকৃতির এ সৌন্দর্য আমাদের দেশের অতিথিদের যেন কেউ ধ্বংস না করতে পারে।
হরিরামপুর থানার ওসি শাহ্ নূর এ আলম বলেন, অতিথি পাখি আমাদের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য। এদের ধ্বংস করা মানেই পরিবেশকে ধ্বংস করা। অতিথি পাখিরা যেন মুক্ত আকাশে, খালে, বিলে, হাওর-বাঁওড়ে স্বাধীনভাবে চলাফেরা করতে পারে, সেদিকে আমাদের সবাইকে দৃষ্টি রাখতে হবে। পাশাপাশি সৌখিনতার বশেও যেন পাখি শিকার না করে সে জন্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সবসময় তৎপর রয়েছে।
Discussion about this post