
নিজস্ব প্রতিবেদক: জুলাই-আগস্ট গণঅভ্যুত্থান ও সম্প্রতি শেখ হাসিনার বক্তব্যকে কেন্দ্র করে দেশে আবার ছাত্রজনতা প্রতিবাদ কর্মসূচি পালন করছে। একদিকে ছাত্র জনতা নেমেছে দেশকে স্বৈরাচারের গ্রাস থেকে মুক্ত করতে, অপরদিকে বিএনপির সাবেক নেতা কর্মী সু-কৌশলে আ’লীগের লোকবল নিয়ে গাজীপুরে নেমেছে ঝুট বাণিজ্য নিয়ন্ত্রনে ও দেশী-বিদেশী অস্ত্রের মহড়ায়। দখলবাজীর নীল নকশায় কখনও ককটেল বিস্ফোরন ও কোথাও কোথাও গুলাগুলি-সহ হতাহতের খবর দেশের প্রথম শ্রেণীর পত্রপত্রিকা ও টেলিভিশন পর্দায়ও স্থান পেতে দেখা যাচ্ছে।
এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য নগরীর বাসন ও গাছা থানার জিরো পয়েন্টে ম্যানাল ফ্যাশন, ভূষির মিল এলাকার ইষ্ট-ওয়েষ্ট সহ আশপাশের এলাকার একাধিক পোষাক কারখানা। স্থানীয় বিএনপির ত্যাগী নেতৃবৃন্দদের একাংশ বলেন, বিগত সরকারের সময় যাদের মাঠে দেখা মেলেনি, তারা এখন বিএনপির বড় নেতা দাবিদার। তারা মাঠে বিএনপির নাম ব্যাবহার করে আওয়ামী ক্যাডার ও সন্ত্রাসী গোষ্ঠির মদদে দলের হাইকমান্ড উপেক্ষা করে নানা অপকর্মে লিপ্ত হচ্ছে।
এসব অপকর্মের দায় দল নিবেনা বলে পরিষ্কার বার্তা থাকলেও এসব উপেক্ষা করেই গাজীপুর মহানগরী এলাকায় প্রকাশ্যে অস্ত্রমহড়া গুলাগুলি ও ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনা এখন বেশ সমালোচনার জন্মদিয়েছে নগরজুরে। আর এসবই হচ্ছে ঝুট বাণিজ্য নিয়ন্ত্রণে কিংবা স্থানীয় প্রভাব বিস্তার জানানোর একমাত্র অংশ হিসেবে। যা আগামীতে দল ও বিএনপি নেতা তারেক রহমানের ৩১দফা বাস্তবায়নে বেশ প্রশ্নবিদ্ধ হবে বলে মনে করছেন বিএনপির ত্যাগী নেতাকর্মী ও স্থানীয় রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা।
এর ধারাবাহিকতায় ওই ঝুট বাণিজ্য নিয়ন্ত্রণ সিন্ডিকেট গোষ্ঠী বিএনপির সুস্থ ধারার রাজনীতি করতে না পেরে বহিষ্কার হয়ে আওয়ামী শক্তির সংমিশ্রণে গাজীপুর মহানগরীর বাসন এলাকার বাসন গ্রামে এক কারখানার (ম্যানাল ফ্যাশন) ঝুট নিয়ন্ত্রণে নিতে বৃহস্পতিবার (৬ফেব্রুয়ারি) সকালে ককটেল ব্লাস্ট করে এলাকায় ভিতি সৃষ্টি করে। সে সময় ৬ মটর সাইকেলে অগ্নিসংযোগও করে তারা। এসব অভিযোগের তীর বাসন থানা বিএনপির সভাপতি তানভির সিরাজের দিকে। তবে মুঠোফোনে কল করলে রিসিভড না করায় তার বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
অন্যদিকে ঐ দিন বিকেল ৩টার দিকে ভূষির মিল এলাকায় ইষ্ট-ওয়েস্ট পোষাক কারখানার ঝুট বাণিজ্য কেন্দ্রিক দেশিয় অস্ত্রের মহড়ার ঘটনা ঘটে। যার ভিডিও ইতোমধ্যে সামাজিক মাধ্যমে ভেসে বেড়াচ্ছে। এ ঘটনার অভিযোগের তীর সাবেক মহানগর সাংগঠনিক সম্পাদক হুমায়ুন কবির রাজু ও গাছা থানা বিএনপির সাবেক বহিষ্কৃত সাধারণ সম্পাদক ফারুক খানের বিরুদ্ধে। তবে মুঠোফোনে তারাও অভিযোগ অস্বীকার করেন। মুঠোফোনে ফারুক বলেন শেখ হাসিনার বক্তব্যের প্রতিবাদে কিছু লোক জড়ো হয়েছিলো ওখানে। অপরদিকে রাজু এসব ঘটনার বিষয়ে জানেননা বলে কল কেটে ফোন বন্ধ করে দেন।
এর আগে গত ১৮ জানুয়ারি মহানগর আ’লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মামুন মন্ডল গ্রেপ্তারের পর বহিষ্কৃত ও সাবেক বিএনপি নেতাদের সাথে মিলেমিশে দলের বিতর্কিত একাংশ ঝুট, ময়লার বাণিজ্য নিয়ন্ত্রনে মহড়ার ঘটনা ঘটে নগরীর বিভিন্ন ওয়ার্ডে। সেসব ঘটনাতেও দেশীয় অস্ত্রের মহড়া খবর উঠে আসে গণমাধ্যমে।
স্থানীয় জনসাধারণের বলেন, অভ্যুত্থান পরবর্তী পুলিশ নিজেই অসহায়ত্বের পরিচয় দিচ্ছে। মাঝে মাঝে পুলিশকে পাহাড়া দিতে দেখা যায় অন্যান্য বাহিনীর সদস্যদের। তাছারা নিরপেক্ষ সরকার ক্ষমতায় থাকায় চুরি, ডাকাতি, ছিনতাইসহ ব্যাবসা বাণিজ্য দখলে মরিয়া হয়ে পড়ছে কিছু লোক।
বাসন গ্রামের ম্যানাল ফ্যাশনের ঝুট নিয়ন্ত্রনে ককটেল বিস্ফোরন মটরসাইকেলে অগ্নিকাণ্ডে স্থানীয় ও বিএনপির একাংশও বলছেন বাসন থানা বিএনপির সভাপতির নির্দেশে এসব কাণ্ড ঘটেছে। তাছারা তিনি ও তার ভাই (আ’লীগ ঘনিষ্ঠ) ওই এলাকার সব বাণিজ্য দখলে নিতেও মরিয়া বলে জানা গেছে। তার এহেন কর্মকাণ্ডের প্রতিবাদে নগরীর চান্দনা এলাকায় তানভীর বিরুদ্ধে গিণমিছিল হয়েছে।
অপরদিকে ভূষির মিল এলাকায় দেশীয় অস্ত্র মহড়া বিষয়ে বহিষ্কৃত ও সাবেক বিএনপির নেতৃবৃন্দরা ঘটনার বিষয়ে জানেন না বলেও জানিয়েছেন। উভয় ঘটনায় বিএনপি আ’লীগ যোগসাজশেই করছে বলে জানান স্থানীয় বিএনপির একাধিক সূত্র। তাছারা মহানগর বিএনপির নেতৃবৃন্দরাও তদন্তে অভিযোগ প্রমানিত হলে সাংগঠনিক ব্যাবস্থার আশ্বাস দেন গণমাধ্যমকে।
স্থানীয় গণ্যমান্য ও বিএনপির সচল কমিটির একাংশের মধ্যে নগর বিএনপি নেতা সিরাজ, গাছা থানা বিএনপি নেতা শাহিন, ও যুবদল নেতা নাজমুল-সহ একাধিক বিএনপি ও সংশ্লীষ্ট সূত্র প্রতিবেদককে জানায়, বিএনপির বহিষ্কৃত ও সাবেক একাধিক নেতৃবৃন্দের নেতৃত্বে আ’লীগের লোকবলের যোগসাজশে এবং কিশোর গ্যাং সদস্যদের উস্কে দিয়ে বিএনপির গায়ে কালিমা লিপ্ত করতেই মরিয়া হয়ে উঠেছে একটি মহল। সেসব ঝুট-গ্যাং গডফাদার ও সদস্যদের সনাক্তকরণে বিএনপির নীতিনির্ধারকরা যদি দ্রুত দলীয় কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণ না করেন তাহলে দলে অচীরেই ছন্দপতন ঘটতে পারে বলেও মতামত দিয়েছেন বিএনপির থানা পর্যায়ের রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা।
এসব আইনশৃঙ্খলা অবনতির ঘটনায় তদন্ত পূর্বক ব্যাবস্থা গ্রহণের পুলিশি আশ্বাস দেয়া হলেও প্রয়োজনীয় দৃশ্যমান পদক্ষেপ না দেখায় স্থানীয় জনমনেও বেশ মিশ্র-প্রতিকৃয়ার জন্ম দিয়েছে। জনমণে স্বস্তি ফিরিয়ে নির্বিঘ্নে, নির্ভয়ে সমাজের সর্বসাধারণের চলাচল নিশ্চিতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের প্রতি প্রতিবেদকের মাধ্যমে উদার্থ আহ্বান জানিয়েছেন খেটে খাওয়া নানা শ্রেণী-পেশার সাধারণ মানুষ।
Discussion about this post