নিজস্ব প্রতিবেদক: গাজীপুরে বনাঞ্চলে জবরদখল উচ্ছেদে সম্প্রতি উচ্চ আদালতের দেয়া নির্দেশনা বাস্তবায়নের দাবিতে মানববন্ধন পালিত হয়েছে।
রবিবার (২১ এপ্রিল) গাজীপুর পরিবেশ আন্দোলন (গাপা)’র আয়োজনে বন অধিদপ্তরের সদর কার্যালয়ের প্রতীকী দপ্তর হিসেবে ঢাকা বন বিভাগের অধীনস্থ রাজেন্দ্রপুর রেঞ্জ কার্যালয় প্রাঙ্গণে গাপা’র শতাধিক সদস্য ও স্থানীয় সাধারণ জনগণের অংশগ্রহণে মানববন্ধনটি পালিত হয়েছে।
বক্তারা বলেন, তীব্র তাপদাহে আজ ঘরে বাহিরে কোথাও থাকা যাচ্ছে না, জনজীবন দুর্বিষহ হয়ে উঠেছে! শিল্পায়নের নামে বনাঞ্চল উজাড় করায় জলবায়ু এমন প্রভাবিত হয়েছে বলে দাবি করেছেন বক্তারা। এছাড়াও বনের জীববৈচিত্র্য চরম সংকটে ও বিলীন প্রায় বলে মনে করেন তারা।
এমন পরিস্থিতিতে মানববন্ধনে অংশগ্রহণকারীরা জবরদখলকে ‘আপোষ দখল’ আখ্যায়িত করে বন বিভাগকে হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, যে সকল ব্যক্তি, শিল্প প্রতিষ্ঠান ও রিসোর্ট-কটেজ সরকারি বনভূমি দখল করে বন উজাড় করেছেন তাদেরকে উচ্ছেদ সহ জড়িত বন বিভাগের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বিরুদ্ধে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা করতে হবে। অন্যথায় সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে আরও কঠোর কর্মসূচির হুঁশিয়ারি দেন বক্তারা।
গাজীপুর পরিবেশ আন্দোলন (গাপা)’র সাংগঠনিক সম্পাদক আবুল হোসেন সবুজ বলেন, সম্প্রতি উচ্চ আদালতে গাপা’র সাধারণ সম্পাদক মো. মেহেদী হাসান এর দায়ের করা একটি রিটের প্রেক্ষিতে মহামান্য আদালত, ‘পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়’ সহ অধীনস্থ সংশ্লিষ্টদের প্রতি গাজীপুরস্থ বনভূমিতে জবরদখল উচ্ছেদে রুল নিশি জারি সহ প্রয়োজনীয় ব্যবস্থার নির্দেশ প্রদান করেছেন। আদালতের সেই নির্দেশনা বাস্তবায়নের দাবিতে আজ আমরা মানববন্ধনে দাড়িয়েছি।
গাপা’র সহ-সভাপতি মোছাদ্দেকুর রহমান তার বক্তব্যে বলেন, আগামী ১৫ দিনের মধ্যে অবৈধ করাতকল বন্ধ না হলে , কঠোর কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে।
গাপা’র সাধারণ সম্পাদক মেহেদী হাসান বলেন, আমরা জানি সরকারি প্রকাশিত তথ্য মতে গাজীপুরের মোট বনভূমির প্রায় ১২ হাজার একর বনভূমি জবরদখল হয়েছে। প্রকৃতপক্ষে তা বেড়ে এখন দ্বিগুণের পথে! বন বিভাগের কতিপয় লোকজনের সহায়তায় প্রভাবশালী শিল্প ও রিসোর্ট মালিকরা এসকল জবরদখল করায় এদের বিরুদ্ধে তেমন কোন ব্যবস্থা নিতে দেখা যায় না। তাই বাধ্য হয়ে আমরা উচ্চ আদালতের দ্বারস্থ হয়েছি।
গাপা’র সভাপতি ফেডরিক মুকুল বিশ্বাস বলেন, আমরা সবাইকে একটা মেসেজ দেয়ার জন্য দাঁড়িয়েছি। সেটা হলো: আমরা যদি এই পরিবেশ, এই গাছ রক্ষা করতে না পারি তাহলে আমরা এই পৃথিবী থেকে হারিয়ে যাব।
তিনি আরো বলেন, বন জবরদখল উচ্ছেদ ও উজাড় রোধে মহামান্য হাইকোর্টের নির্দেশ যথাযথভাবে পালনের জন্য বন কর্মকর্তা ও জেলা প্রশাসনের প্রতি জোর দাবি জানাচ্ছি। এ সময় তিনি বলেন, অবৈধ সকল করাতকল বন্ধ করতে হবে এবং যেগুলোকে লাইসেন্স প্রদান করা হয়েছে তা বাতিল করতে হবে। এ ব্যাপারে আমরা বন বিভাগকে সহায়তা করতে চাই এই কাজগুলো বাস্তবায়ন করতে।
তিনি হুঁশিয়ার দিয়ে বলেন, জবরদখল অনেক হয়েছে, সীমা অতিক্রম করেছে। বন জবর দখলের সাথে বন কর্মকর্তা যারা জড়িত রয়েছে তাদেরকে শাস্তির আওতায় আনতে হবে। বন শুধুমাত্র কাগজে-কলমে থাকলে চলবে না, বন থাকতে হবে বাস্তবে। এছাড়াও বন বিভাগ কর্তৃক হয়রানি মূলক মামলা বন্ধ করতে হবে।
তারেক রহমান জাহাঙ্গীরের সঞ্চালনায় এ সময় আরো বক্তব্য রাখেন, অক্সফোর্ড স্কুল এন্ড কলেজের অধ্যক্ষ মো: সাইফুল ইসলাম, গাপা’র সদস্য এনামুল হক, গাপা’র সহ সাংগঠনিক সম্পাদক সোহাগ রহমান, সদস্য মো: হাসান আলী, শেখ শহিদুল ইসলাম, আল ইহসান গ্রুপের চেয়ারম্যান মোঃ ইমরান হোসাইন মনির, গাছ প্রাইভেট স্কুল সোসাইটির সাংগঠনিক সম্পাদক ইমাম হোসাইন, সদস্য নব কুমার দত্তসহ অন্যান্য নেতৃবৃন্দ।
Discussion about this post