নিজস্ব প্রতিবেদক: গাজীপুরের কাপাসিয়া উপজেলার রায়েদ ইউনিয়ন পরিষদের জন্মনিবন্ধন, মৃত্যু সনদ, নাগরিক সনদ, ওয়ারিশ সনদ, প্রত্যয়নপত্র, ট্রেড লাইসেন্স সহ বিভিন্ন নাগরিক সেবা পেতে নানা ধরনের ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন। পরিষদটির সাধারণ সেবা পেতে আগের থেকে এখন কয়েকগুণ সময় বেশি পোহাতে হচ্ছে সাধারণ জনগণকে। ঘাম জড়িয়েও মিলছে না সেবা। কেথায় গেলে মিলবে সোনার হরিণ নামক এই ইউনিয়ন সেবা, ইউনিয়ন পরিষদের এই ভোগান্তি কি দূর হবে না? দেখার কি কেউ নেই? সে প্রশ্ন এখন ইউনিয়নে সাধারণ মানুষের।
উপজেলার অধিকাংশ সরকারি প্রাথমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয় ভর্তির শেষ সময় ৩০শে নভেম্বর পর্যন্ত। জন্ম নিবন্ধনের অভাবে অনিশ্চিত হয়ে পরেছে শিশুসহ ছাত্র-ছাত্রীদর ২০২৫ শিক্ষাবর্ষে ভর্তির সুযোগ। বাধ্য হয়েই সন্তাননের পড়াশুনার জন্য ধারস্ত হতে হচ্ছে প্রাইভেট শিক্ষা প্রতিষ্টানের দিকে। জন্ম নিবন্ধন আইন মোতাবেক শিশুদের জন্ম নিবন্ধন করতে গেলে বাবা মায়ের জন্ম নিবন্ধন থাকা বাধ্যতামূলক। পরিষদে দিনের পর দিন ঘুরে বিভিন্ন সমস্যায় বাবা মার জন্ম নিবন্ধন করতে না পারায় সন্তানের জন্ম নিবন্ধন করতে পারেননি কয়েকশত সেবা প্রার্থী। ফ্যাসিস্ট সরকারের পতনের পর পরিষদ প্রধানের অুনপস্থিতি, সার্ভার ও ওটিপি সমস্যায় পরিষদ সেবা এখন অভিভাবকহীন পরাধীন সেবায় রুপান্তর করা হয়েছে।
জানা যায়, বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনে আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর থেকে পরিষদের চেয়ারম্যান শফিকুল হাকিম মোল্লা হিরন অনুপস্থিত থাকায় জনগণের ভোগান্তি ব্যাপক আকার ধারন করে। পরবর্তীতে অন্তর্বর্তী সরকার ইউনিয়ন পরিষদ প্রশাসক নিয়োগ দেয়। পরে বিগত ১৩ নভেম্বর পরিষদের সদস্য সায়েম মেম্বারকে প্যানেল চেয়ারম্যান নিয়োগ দেওয়া হলে তিনি কার্যালয়ে অনুপস্থিত থাকায় জন্ম মৃত্যু নিবন্ধন, ওয়ারিশ সনদ, নাগরিকত্ব সনদের ভোগান্তি থেকে রক্ষা পায়নি সাধারণ মানুষ। অভিভাবকহীন ইউনিয়ন পরিষদটি এখন ভোগান্তির অপর নাম হয়ে ইউনিয়ন ডিজিটাল সেবা এখন ডিজিটাল ভোগান্তিতে পরিণত হয়েছে।
নাম না প্রকাশে এক ভোক্তভোগী বলেন, আমার মতো প্রতিদিন শত শত লোক বিভিন্ন কাজে পরিষদে এসে দীর্ঘ অপেক্ষার পরেও জন্ম নিবন্ধনসহ বিভিন্ন সনদ না পাওয়ায় ভোগান্তী চরম আকারে চলে গেছে। দেশ স্বাধীন হয়েছে কিন্তু ভোগান্তি থেকে স্বাধীন হয়নি। আগে অদৃশ্য কারনে মুখ বন্ধ করে রাখতে হতো, এখন পরিষদে লোক নাই, কার কাছে যাব, কারে বলবো, কে শুনবে আমাদের কথা, তাই মুখ বন্ধ করে রাখি।
স্থানীয় বাসিন্দাগণ আরো জানান, জন্ম বা মৃত্যু নিবন্ধন অনলাইনে আবেদন করে মেম্বারের স্বাক্ষর নিয়ে কাগজপত্রসহ পরিষদে জমা দিলে সচিব অনলাইনে রেডি করে, অনলাইনে চেয়ারম্যান অনুমোধন করলে সনদ পাওয়া যায়, যেহেুতু চেয়ারম্যান নাই তাই স্থায়ীভাবে সমাধানের জন্য পরিষদের সচিব বা অরাজনৈতিক বা বিতর্কিত নয় এমন কাউরে স্থায়ীভাবে দ্বায়িত্ব দেওয়া হোক, না হয় একজনকে ক্ষমতা দেওয়া হোক বলে দাবি সাধারণ মানুষের।
আক্ষেপ করে আরেক সেবা গ্রহিতা বলেন, বিষয়টি এখন এমন হয়ে দাড়িয়েছে, আমি বা আমার সন্তান স্বাধীন দেশে জন্ম গ্রহন করেও জন্মের পরিচয় পত্র পেতে যদি এত ভোগান্তি হয়। তাই এখন মনে হচ্ছে, সন্তান জন্ম দেওয়ার আগে জন্ম নিবন্ধন ও মরার আগে মৃত্যু নিবন্ধন করে যেতে হবে, না হলে নিবন্ধনের ঝামেলায় জীবন শেষ হয়ে যাবে।
এ ব্যাপারে গত ২৮ নভেম্বর বৃহস্পতিবার সকালে উপজেলা নির্বাহী অফিসার তামান্না তাসনিম এর সাথে মোবাইলে যোগাযোগ করা হলে, তিনি বিষয়টি দ্রুত সমাধানের আশ্বাস দিলেও ভোগান্তি থেকে পরিত্রান পায়নি ইউনিয়নের সাধারণ মানুষ। ২৯ ও ৩০ তারিখ সরকারি অফিস বন্ধ থাকায় জন্ম নিবন্ধন পায়নি কয়েকশত ভোক্তভোগি। অনিশ্চিত হয়ে পরেছে সন্তানের বিদ্যালয়ে ভর্তির বিষয়টি।
গাজীপুর জেলা প্রশাসক নাফিসা আরেফীন এর সাথে মোবাইলে একাধিকবার কল ও হোয়াটআপে কল মেসেজ দিলেও তিনি রিসিভ করেননি।
প্রকাশক ও সম্পাদকঃ রফিকুল ইসলাম
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত