
নিজস্ব প্রতিবেদক: গাজীপুর মহানগরের পূবাইলের খিলগাঁওয়ে মেহেদী হাসান জনি (৩৩) ওরফে বোবা জনির ঝু’লন্ত লা’শ উ’দ্ধার করেছে পুলিশ। মৃ’ত্যুর পূর্বে চিরকুটে তার নিজের মতো করে লিখে গেছেন- তার অন্তরের জ্বালা যন্ত্রণা দুঃখ-কষ্টগুলো।কারণ হিসাবে জনির আত্মহত্যায় প্রধান প্ররোচনাকারী আপন ফুফাতো ভাই আল আমিনকে সহ তার সাঙ্গপাঙ্গদের দায়ি করে ভাঙা ভাঙা শব্দে চিরকুট লিখে গেছেন জনি।যা তদন্ত করলে থলের বিড়াল বেড়িয়ে আসবে বলে জানালেন এলাকাবাসী। আল আমিন নানীর বাড়িতে মায়ের ওয়ারিশ হিসাবে বসবাস করে আর পৈত্রিক ভিটায় থাকতো বোবা জনি।
জনির বাবা ও ছোট বোন আল আমিনের কারণে মৃ’ত্যুর পথ বেছে নিয়েছেন বলে বিলাপ করে কেঁদেছেন।কয়েক মাস পূর্বে আল আমিন মামলা করে প্রতিবন্ধী জনিকে জেল খাটিয়েছেন।দীর্ঘদিন বাড়ি ছাড়া রেখেছে তাকে।প্রতিবন্ধী থাকা সত্ত্বেও তাকে বাঁচার মতো বাঁচতে দিল না আল আমিন তার ছোট ভাই ও সাঙ্গপাঙ্গরা। মৃত্যর আগের দিন সকালে আল আমিনের ঘনিষ্ঠ নাসির শেখ তাকে খিলগাঁও রমজানের দোকানের সামনে বেধড়ক পেটায়। এই কষ্টের অনুভূতিগুলো লিখেছেন তিনি। ভাঙা ভাঙা শব্দে লিখলেও পড়ে বুঝতে অসুবিধা হবে না কারো তার না বলা বেদনা দুঃখ-কষ্টগুলো। তিনি আত্মহত্যার আগে একান্ত আপনজনসহ অনেকের নামের সঙ্গে ‘আল্লাহ সত্য’ উল্লেখ করে লিখেছেন অনেককেই কাঁদিয়েছে। গাজীপুর আদালতের কয়েকজন আইনজীবী জানিয়েছেন পেনাল কোড ১৮৬০ সালের ৩০৬ ধারায় আত্মহত্যায় প্ররোচনার শাস্তির কথা স্পষ্ট উল্লেখ রয়েছে। আল আমিনের মামা বোবা জনির বাবা ও দাদি এত দিন আল আমিনের অত্যাচারের বিচার চেয়ে মানুষের দ্বারে দ্বারে ঘুরতেন। এলাকাবাসী বলছেন নাগরীক হিসাবে একজন বাক-প্রতিবন্ধী আইনগত বিচার পাইতে পারে।যাদের কারণে সে আত্মহত্যার পথ বেছে নিয়েছে। যারা তাকে মাদক ডেলিভারি ম্যান বানিয়েছে তাদের শাস্তির আওতায় আনলে ভবিষ্যতে এমন নেক্কারজণক ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটবেনা।
উল্লেখ রোববার দুপুরে নগরীর ৪১নম্বর ওয়ার্ডের খিলগাঁও পশ্চিমপাড়া এলাকার নিজ ঘরের টিনের আড়ার সঙ্গে গামছা বেঁধে ঝু’লন্ত অবস্থায় তার লা’শ দেখতে পেয়ে প্রতিবেশীরা থানায় খবর দেন। পরে পুলিশ এসে লা’শ উ’দ্ধার করে গাজীপুর তাজউদ্দীন আহমেদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ময়নাতদন্ত করে লাস হস্তান্তর করে।
বাক-প্রতিবন্ধী মেহেদি হাসান জনি একই এলাকার জাকির হোসেনের ছেলে। তার জন্মদাতা মা-বাবা বিবাহ বিচ্ছেদ করে পূর্বেই পৃথকভাবে সংসার করছেন। আর জনি পৈত্রিক ভিটায় ছোট্ট একটি টিনের ঘরে একাই বসবাস করছিলেন।
বাক-প্রতিবন্ধী অল্পশিক্ষিত জনি ইদানীং তার ভিটাঘর নিয়ে খুবই উৎকণ্ঠায় দিন কাটাতেন। আল আমিনের মিথ্যা মামলায় নাকি ইতোমধ্যে জেলও খেটেছেন। বিয়েও করেছিলেন। সেই ঘরে দুটি ছেলেসন্তানও আছে; কিন্তু তার ছোট্ট দুটি সন্তান নিয়ে তার স্ত্রী তাকে ছেড়ে বাপের বাড়ি চলে যায়। সেই থেকে একাই সংসার জীবন অতিবাহিত করছিল বোবা জনি।
রবিবার তার দাদিকে তার ব্যবহৃত এন্ড্রয়েড মোবাইল, চিরকুট, প্রতিবন্ধী ভাতার কার্ড, রেশন কার্ড দিয়ে কবর দেওয়ার জায়গা দেখিয়ে দিয়ে কেন সে বাঁচতে চায় না সে কথা জানিয়েই বিচার না পেয়ে চির বিদায় নিলেন বোবা জনি।
পূবাইল থানার অফিসার ইনচার্জ শফিকুল ইসলাম জানান, বিষয়টি অধিকতর তদন্ত করে চিরকুটে যাদের নাম লিখা আছে তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।
Discussion about this post