
নিজস্ব প্রতিবেদক: পুত্রসন্তানহীন এক প্রাক্তন শিক্ষক যিনি জীবনের শ্রেষ্ঠ সময়গুলো দেশের ভবিষ্যৎ প্রজন্ম গড়ায় ব্যয় করেছেন আজ তিনিই অবিচারের শিকার। দীর্ঘ পরিশ্রমে কেনা জমিটি যুবলীগ কর্মী, ভূমিদস্যু মামুন (৩৫) এবং তার ভাই ছাব্বির (২৭)-এর দখলচেষ্টার শিকার। সরেজমিন অনুসন্ধানে উঠে এসেছে আরও ভয়ংকর চিত্র। মামুন বহুদিন ধরেই এলাকার নিরীহ মানুষের জমি, এমনকি সরকারি রাস্তা পর্যন্ত দখল করে রেখেছে বলে অভিযোগ রয়েছে। চরম আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছে শিক্ষক দম্পত্তি, যাদের জীবনের শেষ অধ্যায়ে চাহিদা ছিল শুধু একটু শান্তি, একটু নিরাপত্তা কিন্তু তা যেন অধরাই থেকে যাচ্ছে ভূমিদস্যুর থাবায়।
ভুক্তভোগী ইমারত(৬৫) ও তার স্ত্রী মাজেদা(৫৭) জানান, বাগেরহাট মৌজার আরএস ১৪৪ খতিয়ানে ২৩৯নং দাগে রেকর্ডীয় মালিক আব্দুল ছাত্তারের কাছ থেকে রেজিস্ট্রিকৃত ৯৫৫১নং দলিলে ৯ শতাংশ ও ১০০৪৫নং দলিলে ৪.৫০ শতাংশ আরেক আর.এস রেকর্ডিয় মালিক চাঁন্দু মিয়ার কাছ থেকে ৯৫৬৬নং দলিলে ১০.৫০ শতাংশ ও ৮৭৮ নং দলিলে উল্লেখিত খতিয়ানে মাজেদার নামে ৩.৫০ শতাংশসহ সর্বমোট ২৭.৫০ শতাংশ জমি ক্রয় করে ভোগ দখলে আছেন। পরবর্তী সমেয় ইমারত ৯৫৫১নং দলিলের সম্পত্তি হইতে তার স্ত্রী মাজেদাকে ৯৫৬৩ দলিলের মাধ্যমে ৪.৫০ শতাংশ সম্পত্তি হেবাদান করেন। ২০/২/২০১৮ ইং তারিখে এসি ল্যান্ড অফিস হইতে নিজেদের নামে নামজারি করে ৪৮৪ জোত খুলে নিয়মিত খাজনা পরিশোধ করে ৪০ বছর ধরে ভোগদখলে আছেন। রেকর্ড ও কাগজপত্রে দেখা যায়, আব্দুল ছাত্তার ও চাঁন্দু মিয়া উভয়েই মামুনের আপন চাচা ও উভয়েই আর.এস রেকর্ডিয় মালিক। আব্দুল ছাত্তার ও চাঁন্দু মিয়ার বিক্রিত জমি জমির সাথে মামুনের কোন সম্পর্ক নাই। মামুনের পিতা নুরুল ইসলাম আর.এস ১৪৪ খতিয়ানে হিস্যায় ৫৮ শতাংশ সম্পত্তি থেকে ৩৯৫নং দলিলে আক্কাস আলীর নিকট ২৪.৫০ শতাংশ, ১০৫নং দলিলে ২.৬২৫ শতাংশ, ৩৯৮নং দলিলে ১.৭৫ শতাংশ সিদ্দিকুর রহমানের নিকট বিক্রয় করেছেন।
ভোক্তভোগির জামাতা ইকবাল বলেন, ২০২২ সালের শুরুতে জমির গাছ বিক্রির সময় মামুনগং এসে বাধা দিলে থানায় অভিযোগ দায়ের করা হয়। পুলিশ ও স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিরা জমির বৈধতা প্রমাণে কাগজ চাওয়া হলে মামুন কিছুই দেখাতে পারেনি। এরপরও দখলচেষ্টা চালালে ভুক্তভোগী পরিবার আদালতে ফৌঃকাঃ ১০৭ ধারায় (পি-১২৩/২২) মামলা করেন। আদালত মুচলেকা গ্রহণ করে নিষ্পত্তির আদেশ দেয়। আদালতের আদেশ উপেক্ষা করে মামুন গং পূণরায় জমিতে প্রবেশ করে গাছ কেটে নেয় ও দখলের চেষ্টা করলে পরিবারের পক্ষে আমি ফৌঃকাঃ ১৪৫ ধারায় (৯৮/২২) মামলা করি। আদালত এসি ল্যান্ড কাপাসিয়ার মাধ্যমে সরেজমিন তদন্ত করে মালিকানা ও দখল নিশ্চিত করে ৯/১১/২২ তারিখে প্রসেডিং মোঃনং ১৫৮/২২ দ্বারা মামুনদের জমিতে প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা জারি করেন। তদন্তকালে মামুনের আপন চাচাত ভাই-বোন, আব্দুল ছাত্তারের মেয়ে শাহনাজ ও চান্দু মিয়ার ছেলে আশরাফুল স্বশরীরে উপস্থিত থেকে তাদের বাবার জমি বিক্রয়ের বিষয়টি স্বীকার করে স্বাক্ষ্য দেন।
তিনি আরো জানান, আদালতের দুইটি আদেশ অমান্য করে মামুনগং একাধিকবার জমিতে প্রবেশ করে গাছ কেটে নিয়ে গেছে, জমিতে লাগানো একশর অধিক সুপারি গাছ সহ অন্যান্য জাতের কয়েকশত ছারা গাছ কেটে ফেলে দিয়েছে। মামুনগংদের বাধা দিতে গেলে রামদা নিয়ে তেরে আসে। প্রত্যেকটি ঘটনা এলাকার গণ্যমান্য ব্যক্তিসহ বর্তমান ও সাবেক এবং মহিলা মেম্বারকে সরেজমিনে দেখানো হয়েছে। ইউনিয়ন পরিষদ ও কাপাসিয়া থানায় একাধিক লিখিত অভিযোগ দেওয়া হয়েছে। জমি বেদখলের আশঙ্কা তো রয়েছেই, সেই সঙ্গে যে কোনো সময় মামুন গং-এর হাতে পরিবারের সদস্যদের প্রাণনাশের আশঙ্কাও রয়েছে বলে জানান তিনি। । আক্ষেপ করে আরো বলে, চব্বিশে দেশ পূণরায় স্বাধীন হয়েও ন্যায়বিচার কি এখনো কেবল কাগজেই থাকবে? দেশ ও আদালতের ন্যায় বিচার বাস্তবায়ন না হলে একজন সাধারণ মানুষ কোথায় যাবে? এ বিষয়ে মামুনের মোবাইলে একাধিকবার কল দিলেও তিনি রিসিভ করনেনি।
Discussion about this post