কালিমুল্লাহ ইকবাল বিশেষ প্রতিনিধি: মহান মে দিবস উপলক্ষে প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের সামাজিক সুরক্ষা জোরদার করার লক্ষ্যে বিনামূল্যে স্বাস্থ্যসেবা প্রদান করা হয়েছে।
১লা মে বৃহস্পতিবার সকালে গাজীপুর মহানগরীর টঙ্গীর স্টেশন রোড শারীরিক প্রতিবন্ধী সুরক্ষা ট্রাস্ট মৈত্রী, শিল্প সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে স্বাস্থ্যসেবা কার্যক্রম অনুষ্ঠিত হয়। এ সময় মৈত্রী শিল্পের কর্মকর্তা-কর্মচারীসহ বিভিন্ন প্রেশার মানুষ ডায়াবেটিস, হেপাটাইটিস বিওসিসহ বিভিন্ন রোগের ফ্রি চিকিৎসা সেবা গ্রহন করেন। চিকিৎসা সেবা প্রদান শেষে এক আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়।
শারীরিক প্রতিবন্ধী সুরক্ষা ট্রাস্ট, মৈত্রী শিল্প কারখানা ব্যবস্থাপক মোঃ মহসীন আলীর সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন, শারীরিক প্রতিবন্ধী সুরক্ষা ট্রাস্ট, মৈত্রী শিল্প নির্বাহী পরিচালক (যুগ্মসচিব) মোঃ সেলিম খান। প্রধান অতিথি হিসেবে বলেন, আজ ১ মে মহান মে দিবস, শ্রমজীবী মানুষের অধিকার আদায়ের দিন। ১৮৮৬ সালের এই দিনে যুক্তরাষ্ট্রের শিকাগো শহরের হে মার্কেটে শ্রমিকেরা কাজের সময় সীমা ৮ঘণ্টা নির্ধারণ, কাজের উন্নত পরিবেশ, মজুরি বৃদ্ধিসহ বিভিন্ন দাবিতে ধর্মঘট আহ্বান করেন। দাবি আদায়ের জন্য বিক্ষুব্ধ শ্রমিকেরা সেদিন পথে নেমে এসেছিলেন। অত্যন্ত বর্বর কায়দায় দমন করা হয়েছিল সেই শ্রমিক বিক্ষোভ। পুলিশের গুলিতে জীবন উৎসর্গ করেছিলেন শ্রমিকেরা। সারা বিশ্ব সোচ্চার হয়ে উঠেছিল সেই ঘটনায়। শিকাগোর শ্রমিকদের আত্মদানের মধ্য দিয়েই প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল শ্রমজীবী মানুষের অধিকার। এবার মে দিবসের প্রতিপাদ্য ‘শ্রমিক-মালিক গড়বো দেশ, স্মার্ট হবে বাংলাদেশ’। বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান আনুষ্ঠানিক ভাবে এই মে দিবসটিকে জাতীয় দিবস হিসেবে ঘোষণা করেন।
তিনি আরো বলেন, শারীরিক প্রতিবন্ধী সুরক্ষা ট্রাস্ট, মৈত্রী শিল্প সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের তত্ত্বাবধানে পরিচালিত এ প্রতিষ্ঠানের প্রতিবন্ধীদের তৈরি মুক্তা পানিসহ বিভিন্ন প্লাস্টিক পণ্য এখন দেশজুড়ে প্রশংসিত হয়ে আসছে। সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে ঘুরে দাঁড়িয়েছে এই প্রতিষ্ঠানটি। প্রতিবন্ধীরা সমাজ বা দেশের বোঝা নন। তারা পিছিয়ে নেই অনেক কাজে। বরং মানসিক শক্তি, উন্নত প্রশিক্ষণ আর সরকারের পৃষ্ঠপোষকতায় দেশের প্রবৃদ্ধি অর্জন করতে কাজ করে চলছে প্রতিবন্ধীরাও। অন্যদের মতো কাজ করে উপার্জনের মাধ্যমে নিজেদের করছেন স্বাবলম্বী। তাদের অনন্য সফল কর্মময় জীবনের সাক্ষ্য দিচ্ছে টঙ্গীর ‘মৈত্রী শিল্প’ পণ্য। ১৯৮৩ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় এই প্রতিষ্ঠানটি। এই প্রতিষ্ঠানটি প্রায় ৯০ ভাগ শারীরিক প্রতিবন্ধী, বাকপ্রতিবন্ধী, শ্রবণ প্রতিবন্ধী, আংশিক দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী ও অটিজম কাজ করছেন।
প্রতিবন্ধীদের তৈরি এই সুপেয় মুক্তা পানি এখন বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে দেশের সর্বত্র। আমেরিকান বিশ্ববিখ্যাত ওয়াটার পিউরিফিকেশন অ্যান্ড বটলিং প্লান্ট মেশিনারিজ প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান হতে আমদানিকৃত মুক্তা ড্রিংকিং ওয়াটার প্লান্ট। অত্যাধুনিক মেশিন দ্বারা রিভার্স অসমোসিস সিস্টেমে পরিশোধিত হয় এই পানি। যে কারণে মুক্তা বোতলজাত পানি সম্পূর্ণরূপে জীবাণুমুক্ত। বাজারে প্রচলিত অন্যান্য বোতলজাত পানির তুলনায় ভারসাম্যপূর্ণ যা মানবদেহের জন্য সম্পূর্ণ নিরাপদ ও স্বাস্থ্যকর। এখানকার উৎপাদিত পণ্যের বিক্রয়লব্ধ আয় প্রতিবন্ধীদের কল্যাণেই ব্যয় করা হচ্ছে। কর্মরত শ্রমিকরা বিনামূল্যে পাচ্ছে চিকিৎসাসেবা, বছর বছর পাচ্ছেন বাড়তি বেতন। বেতন-ভাতা নিয়ে নেই শ্রমিক অসন্তোষ। ব্যাংকের মাধ্যমে উত্তোলন করছেন বেতন-ভাতা। ভালো কাজের জন্য পাচ্ছেন পুরস্কারও। পরিকল্পনা চলছে আবাসন ব্যবস্থার। বিএসটিআই, আইসিডিডিআরবি ও বিসিআইআরের রিপোর্ট অনুযায়ী মুক্তা পানি বাজারে প্রচলিত অন্যান্য বোতলজাত পানির তুলনায় উৎকৃষ্ট।
প্রতিষ্ঠান নির্বাহী পরিচালক মো: সেলিম খান (যুগ্ম সচিব) বলেন, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রতিবন্ধীদের কল্যাণে কাজ করে যাচ্ছেন। তাঁর অনুপ্রেরণায় প্রতিবন্ধীরা এগিয়ে যাচ্ছে এবং কর্মসংস্থানের সুযোগ পাচ্ছে। সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের মাননীয় মন্ত্রী ডা: দীপু মনি ও সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের সম্মানিত সচিব জনাব মোঃ খায়রুল আলম সেখ এর প্রত্যক্ষ নির্দেশনায় মৈত্রী শিল্প প্রতিবন্ধিতা উত্তরণে নিরলস ভাবে কাজ করে যাচ্ছে। প্রধান অতিথি আরো বলেন আগের তুলনায় শ্রমিকরা এখন অনেক ভালো আছেন। এখন আর বেতন-ভাতা নিয়ে কোনো ঝামেলা নেই। অনেকটাই পাল্টে গেছে। অন্যান্য পানির তুলনায় মুক্তা পানির গুণগত মান অনেক ভালো। দেশব্যাপী মুক্তা পানির ব্যাপক চাহিদা রয়েছে এবং তা দিনদিন বৃদ্ধি পাচ্ছে।
বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য প্রদান করেন ইসলামিক ফাউন্ডেশনের পরিচালক মোঃ মহিউদ্দিন মজুমদার বাদল এ সময় উপস্থিত ছিলেন, প্রশাসনিক কর্মকর্তা মো. ইউনুস আহমেদ, রক্ষণাবেক্ষণ প্রকৌশলী মো. আব্দুল আজিজ, আইটি অফিসার রাকিবুল ইসলাম, উপ-সহকারী প্রকৌশলী মো. জিল্লুর রহমান, চাঁদ মিয়া আকাশ, হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তা মোঃ শাওন মেহনেওয়াজ, অডিট অফিসার মোহাম্মদ ওয়াসিউর রহমান, ওয়াটার প্লান্ট সুপারভাইজার মোঃ আনোয়ার হোসেন, স্টোর অফিসার হাফিজুর রহমান প্রমুখ।
Discussion about this post